সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : পেকুয়া উপজেলায় পূজামন্ডপ ও হিন্দু বসতিতে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৯ জনকে আটক করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য।
পেকুয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিশ্বাস পাড়ার কেন্দ্রিয় পূজামন্ডপে এ হামলা ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পেকুয়ার শিলখালী ও মগনামায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে।
তবে আটক ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
কুমিল্লায় সংঘটিত সহিংসতার জের ধরে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।
মোহাম্মদ আলী বলেন, সন্ধ্যায় পেকুয়া সদরের বিশ্বাস পাড়ায় কেন্দ্রিয় পূজামন্ডপে একদল দূর্বৃত্ত মিছিল সহকারে হামলার চেষ্টা চালায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে হামলা চেষ্টাকারিদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলাকারিরা গুলি ছুড়ে।
” পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে। এক পর্যায়ে হামলাকারিরা ঘটনাস্থল থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ৭/৮ জন আহত হয়। হামলাকারিরা গেইটের সামান্য কিছু অংশ ভাংচুর করলেও মূল পূজামন্ডপের ক্ষতি সাধন করতে পারেনি। “
ওসি বলেন, “ পেকুয়া সদরে পূজামন্ডপে হামলা চেষ্টা ঘটনার পর বিভিন্ন স্থানে দূর্বৃত্তরা খন্ড খন্ড মিছিল বের করে। এতে দূর্বৃত্তরা শিলখালী ইউনিয়নের কাছারী মুরা শীল পাড়া পূজামন্ডপে এবং মগনামায় কিছু হিন্দু বাড়ীতে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। “
মোহাম্মদ আলী বলেন, রাতে পেকুয়ায় পূজামন্ডপ ও হিন্দু বসতিতে হামলার খবরে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও র্যাবসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গগীর আলম বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় একদল উগ্রবাদী দূর্বৃত্ত মিছিল সহকারে পেকুয়া সদরের বিশ্বাস পাড়ার পূজামন্ডপে হামলার চেষ্টা চালায়। এসময় হামলাকারিরা পূজামন্ডপের গেইট ভাংচুর করেছে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হামলাকারিদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
“ এক পর্যায়ে হামলাকারিরা পালিয়ে যাওয়ার সময় বিশ্বাস পাড়া এবং পার্শ্ববতী শীল পাড়ায় হিন্দুদের বসত ঘর লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে। এসময় কিছু বাড়ীর ঘেরা-বেড়াও ভাংচুর করা হয়েছে। “
“ এ ঘটনার পর উগ্রবাদীরা পেকুয়ার বিভিন্ন স্থানে খন্ড খন্ড মিছিল বের করে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে শিলখালী ইউনিয়নের কাছারী মুরা শীল পাড়া পূজামন্ডপে এবং মগনামায় কিছু হিন্দু বসত ঘরে ভাংচুর চালালিয়েছে ” বলেন পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান।
জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেন বলেন, “ স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত ইসলামের কর্মিরা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে সরকার বিরোধীরা এ অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারিরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মিদের বাড়ীতেও হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। “
হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পেকুয়া উপজেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ কুমার সুশীল বলেন, সন্ধ্যায় একদল দূর্বৃত্ত মিছিল সহকারে পেকুয়া সদরের বিশ্বাস পাড়া পূজামন্ডপে হামলা চালিয়েছে। এতে পূজামন্ডপের গেইটসহ কিছু অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া শিলখালী ইউনিয়নের শীল পাড়া পূজামন্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাংচুরসহ তছনছ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “ পুজামন্ডপে হামলা চালিয়ে চলে যাওয়ার সময় হামলাকারিরা পেকুয়া সদর, শিলখালী ও মগনামায় বেশ কয়েকটি হিন্দুদের বাড়ীতে ভাংচুর করা হয়েছে। তছনছ করা হয়েছে ভাংচুর করা বাড়ীর মমালামাল ও আসবাবপত্র। “
এ ঘটনার পর থেকে পুলিশসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর টহল জোরদার থাকলেও পেকুয়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে আতংক বিরাজ করছে বলে জানান হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের স্থাণীয় এ নেতা।
পেকুয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, পেকুয়া পূজামন্ডপে হামলা ও হিন্দুদের বসত ঘরে ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনায় জড়িততদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply